এই মুহুর্তে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে যাচ্ছে। এমনটাই জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আরো আশঙ্কার কথা হলো, আগামীকাল বিকাল নাগাদ যখন ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে, ততক্ষণে এটি প্রবল রূপ করবে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, সামুদ্রিক ঝড়ে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। আর গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন সেটি হয় ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা এর বেশি হলে তা হয় ‘সুপার সাইক্লোন’।

এ পর্যন্ত আবহাওয়াবিদদের যে পূর্বাভাস তাতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে আঘাত আনার সময় রেমালের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যেই থাকবে। তার মানে, রেমাল ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবেই দেখা দিতে যাচ্ছে।

এই মুহুর্তে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি প্রতি ঘণ্টায় ৮-১০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।

উপকূলের আরও কাছাকাছি এসে ভূমিতে উঠে আসার আগে শক্তি সঞ্চয় করে রোববার (২৬ মে) ঝড়টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টির ‘রেমাল নামটি প্রস্তাব করেছে ওমান। এটি একটি আরবি শব্দ। এই নামের অর্থ বালি।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি নিয়ে শনিবার (২৫শে মে) সকালে ৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

আবহাওয়াবিদরা বলেন, আজ সকালেই গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে অনেক সময় সাগরে ‘গভীর নিম্নচাপ’ অবস্থা দীর্ঘায়িত হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে।

এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, রেমাল খেপুপাড়া-সুন্দরবন ও পশ্চিমবঙ্গমুখী হবে। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল বিকাল থেকে রাতের মধ্যে ঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। এদিকে, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মুহিব্বুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় সাত থেকে দশ ফিট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কম রাখতে সরকারের তরফ থেকে সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।